বাংলা রচনা: 2016

Sunday, October 16, 2016

আইনের শাসন

(সংকেত: ভূমিকা; আইনের শাসন; আইনের শাসনের নীতি ও অভিব্যক্তি; আইনের শাসনের প্রয়োজনীয়তা; আইনের শাসন ও বাংলাদেশের সংবিধান; বাংলাদেশে আইনের শাসনের বিভিন্ন দিক; আইনের শাসনে আইন বিভাগের গুরুত্ব;বাংলাদেশে আইনের শাসনের প্রতিবন্ধকতাসমূহ; আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আমদের করণীয়; উপসংহার।)

ভূমিকা: আধুনিক বিশ্ব হলো গণতান্ত্রিক বিশ্ব। আর গণতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থার মূল নির্দেশক হলো আইনের শাসন। পৃথিবীর প্রতিটি দেশের সরকার নিজেদেরকে গণতান্ত্রিক বলে দাবি করে। দেশ ও সরকার পদ্ধতিভেদে আইন ও সংবিধান ভিন্ন হলেও তা পৃথিবীর সকল রাষ্ট্রেই বিদ্যমান। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আইনের শাসন ছাড়া যেহেতু নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় না তাই গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশেও আইন, সংবিধান, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও প্রতিষ্ঠান সবই আছে। তবে বাংলাদেশে আইনের অপপ্রয়োগে মানুষের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। তাই বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভিত্তি মজবুত করতে হলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং এজন্য আইনের সুষ্ঠু ও যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

আইনের শাসন: রাষ্ট্র বা সরকার ব্যবস্থায় ক্ষমতার ক্ষেত্রকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:- আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ। আঞ্চলিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিটি ক্ষেত্রেই শাসন বিভাগের ভূমিকাই তুলনামূলকভাবে বেশি। আইন বিভাগ আইন প্রণয়ন করে, আর বিচার বিভাগ আইনের ব্যাখ্যা দান, বিভিন্ন মামলায় প্রচলিত আইনের প্রয়োগ ও আইন অমান্যকারীকে শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা করে। শাসন বিভাগ আইন বিভাগের প্রণীত আইনসমূহকে বিচার বিভাগের সহায়তায় কার্যে পরিণত করে। মূলত এটিই হলো আইনের শাসন। আইনের শাসনে সংবিধানের ভূমিকা অনস্বীকার্য। রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান সংবিধান মেনে রাষ্ট্র পরিচালনা করেন এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।

আইনের শাসনের নীতি ও অভিব্যক্তি: আইনের শাসন হলো আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ ও কর্তৃত্ব। রাষ্ট্র পরিচালনার প্রতিটি ক্ষেত্রে সকল বিষয় নির্ধারণের মানদ- হবে আইন এবং রাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান হিসেবে বিবেচ্য। প্রত্যেক নাগরিক যেমন তার কৃতকর্মের জন্য আইনের মুখোমুখি হবে তেমনি নিজেদের অধিকার ও দাবি আদায়ে আইনের আশ্রয় গ্রহণ করতে পারবে। বিচার বিভাগকে আইন ও শাসন বিভাগের নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখতে হবে। আইন ব্যবস্থা জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার অনুকূলে হতে হবে। সুতরাং আইনের শাসনের একটি প্রয়োগিক ক্ষেত্র আছে এবং এটি একটি সার্বিক প্রক্রিয়া।

আইনের শাসনের প্রয়োজনীয়তা: একটি গণতান্ত্রিক দেশের গণতান্ত্রিক অবস্থার নিশ্চয়তা প্রদান করে আইনের শাসন। আইনের শাসন দেশের গণতন্ত্রের ভিত্তিকে মজবুত ও গতিশীল করে; গণতন্ত্র চর্চার পথকে করে অবাধ ও উন্মুক্ত। আইনের শাসনের ফলে জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হয়। আইনের শাসন বিরাজ করলে দেশে আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত হয়। আইনের প্রতি জনগণের শ্রদ্ধা বৃদ্ধি পায়। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত হয়। মানুষের বাক-স্বাধীনতা ও চিন্তা-বিবেকের স্বাধীনতা বৃদ্ধি পায়। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়। সকল জনগণের সমানভাবে আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার নিশ্চিত হয়। আইনের শাসনের প্রয়োজনীয়তা তাই অপরিসীম।

আইনের শাসন ও বাংলাদেশের সংবিধান: বাংলাদেশের সংবিধানে আইনের শাসনের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সংবিধানের ২৭ নং ধারায় বলা হয়েছে সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী। ৩২ নং ধারা অনুযায়ী আইনের বাইরে কোনো ব্যক্তিকে ব্যক্তিস্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। সুতরাং বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী সরকার আইনের বাইরে কোনো নাগরিকের জান, মাল ও সম্মানের হানিকর এমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করবে না। কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তা প্রচলিত আইন মেনে করতে হবে এবং তাকে প্রচলিত নিয়মনীতি ও পদ্ধতি অনুসারে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে।

বাংলাদেশে আইনের শাসনের বিভিন্ন দিক: বাংলাদেশ উন্নয়নশীল বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। এদেশের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় বিদ্যমান সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা, আদর্শ সংবিধান, নির্বাচিত সরকার ও আইন পরিষদ এবং দীর্ঘদিনের প্রতিষ্ঠিত বিচার ব্যবস্থা ইত্যাদি থাকায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু বাস্তবে আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রে আইনের শাসন একেবারে সীমিত। আমাদের আইনি কাঠামো, প্রয়োগকারী সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান এবং রাজনৈতিক দল সবই যেন আইনের শাসনের প্রতিবন্ধক। এ দেশে আইনের উপর ব্যক্তির প্রাধান্য ও আইনের অসম প্রয়োগনীতি বিদ্যমান। এ দেশে পর্যাপ্ত আইন ও নীতিমালা বিদ্যমান থাকলেও তার যথাযথ বাস্তবায়ন নেই। সর্বোপরি বাংলাদেশে আইনের শাসনের নীতিমালা শুধুই সংবিধানে লিপিবদ্ধ বাস্তবে সাধারণ জনগণের বেলায় তা সত্য বলে প্রতীয়মান হয় না।

আইনের শাসনে আইন বিভাগের গুরুত্ব: আইন প্রণয়ন করা হলো আইন সভার প্রধান কাজ। দেশের নাগরিকের সকল ইচ্ছা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটে আইনসভার মাধ্যমে। আইন সভা কর্তৃক প্রণীত আইন অনুযায়ী শাসনকার্য !

ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য

ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য

(সংকেত: ভূমিকা; ছাত্রজীবন; ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য; সামাজিক ক্ষেত্রে ছাত্রদের দায়িত্ব ও কর্তব্য; রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দায়িত্ব ও কর্তব্য; পারিবারিক ক্ষেত্রে দায়িত্ব ও কর্তব্য; দেশাত্ববোধ; নিয়মানুবর্তিতা; নৈতিক মূল্যবোধ ও শিষ্টাচার; উপসংহার।)

ভূমিকাঃ “আমরা শক্তি আমরা বল/ আমরা ছাত্রদল/ মোদের পায়ের তলায় মূর্চে তুফান/ ঊর্ধ্বে বিমান ঝড়-বাদল/ আমরা ছাত্রদল।” কাজী নজরুল ইসলামছাত্ররাই একটি দেশের ভবিষ্যৎ। তাদের দিকেই তাকিয়ে থাকে দেশ ও সমাজ। তারা ভোরের শিশির, প্রভাতের আলোর মতো নবজীবনের দ্যুতি ছড়ায়। তারা তাদের কর্মে দেশ ও সমাজের সব অনাচার, অবিচার, অসঙ্গতি দূরে ঠেলে দেয়। তাদের মধ্যে রয়েছে অপার সম্ভাবনা। তারা পারে না এমন কাজ পৃথিবীতে নেই। ছাত্রসমাজ জেগে উঠলে পুরো জাতি, দেশ ও পৃথিবী জেগে উঠে। তারা তাদের সংগ্রাম দিয়ে যেমন দেশকে সংঘাত মুক্ত করে তোলে, তেমনি নৈতিকতা, শিষ্টাচার, সৌজন্যতা দিয়ে দেশকে সুখী ও সুন্দর করে তোলে।

ছাত্রজীবনঃ অধ্যায়নের জীবনটাই ছাত্রজীবন। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে দেশের বাইরে বিভিন্ন গবষেণামূলক অধ্যয়নের সবটুকুই ছাত্রজীবনের অন্তর্ভুক্ত। একজন ছাত্র কোনো কিছুতেই পিছপা হয় না। ছাত্রজীবন মানুষের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। ছাত্রজীবনেই মানুষ ভবিষ্যৎ জীবনের ভিত গড়ে তোলে। জীবনকে প্রাণপ্রাচুর্যে ভরে তোলার শিক্ষা মানুষ ছাত্রজীবন থেকে পায়। বদান্যতা, সততা, ন্যায়-নিষ্ঠা, নিয়মানুবর্তিতা, দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ, মহানুভবতার শুরু ছাত্র জীবন থেকেই। প্রতিটি ছাত্রই দেশগড়ার হাতিয়ার। ভবিষ্যতে তারাই দেশের নেতৃত্ব দিবে। M.K Gandhi বলেন, "The students are the Future leaders of the country who could fullill country's hopes being capable."

ছাত্রদের দায়িত্ব ও কর্তব্যঃ “ছাত্র নং অধ্যয়নং তপ” এটিই ছাত্রদের মূলমন্ত্র। সংস্কৃত এই কথাটির অর্থ- অধ্যয়নেই ছাত্রদের একমাত্র তপস্যা। ছাত্রজীবন মানেই জ্ঞান-বিজ্ঞানের জগৎ। যেখান থেকে ছাত্ররা প্রতিনিয়ত নতুন কিছু শিখবে। আর এ জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে কর্মমুখী জীবনে প্রবেশ করবে। স্বাস্থ্যকর, মানসম্পন্ন, সুন্দর পরিবেশে কাজ করতে চাইলে ছাত্রজীবন থেকেই সেই মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। ছাত্রজীবনে পড়াশোনার কোনো বিকল্প নেই। তার পাশাপাশি মানুষ্যত্ববোধও অর্জন করতে হবে। শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হবে। শিক্ষকের আদেশ পালন করলে একটি ছাত্র অবশ্যই ভালো গুণের অধিকারী হতে পারবে। কেননা শিক্ষকই একটি ছাত্রকে সৎ ও মেধাবী করে তোলে। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, "None but those who have the spirit of forbearance are fit to be teaehcr." তাই শিক্ষককে সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে আসীন করতে হবে। ছাত্রদের অন্যতম প্রধান কর্তব্য শুধুমাত্র পাঠ্যপুস্তকে সীমাবদ্ধ না থাকা। পাঠ্যপুস্তকের বাইরেও অনেক কিছু শেখার রয়েছে যা তাদেরকে প্রকৃত জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করবে।

সামাজিক ক্ষেত্রে ছাত্রসমাজের দায়িত্ব ও কর্তব্যঃ একটি দেশের সচেতন নাগরিক হচ্ছে ছাত্রসমাজ। অধ্যয়ন ছাত্রদের মূল লক্ষ্য হলেও সামাজিক ক্ষেত্রে তাদের অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। তারাই দেশকে সঠিক পথ অনুসরণে সহায়তা করতে পারে। আমাদের দেশে এমন অনেক দরিদ্র সুবিধাবঞ্চিত পরিবার রয়েছে যেখানে একটি মাত্র সদস্য শিক্ষিত। সেই সদস্যটি পুরো পরিবারে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয় এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ গড়ে তোলে। শুধু পরিবার কিংবা সমাজ নয় ছাত্রসমাজকে পুরো জাতির নিরক্ষরতা দূরীকরণে সহায়তা করতে হবে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যেখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার মারাত্মক আকার ধারণ করছে সেসব দেশের ছাত্রসমাজের উচিত সংঘবদ্ধভাবে জনগণকে পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে এবং অধিক হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কুফল সম্পর্কে সচেতন করে তোলা। সমাজকে এবং শিক্ষাঙ্গনকে সন্ত্রাসমুক্ত করার দায়িত্ব ছাত্রদেরই কাঁধে নিতে হবে। আমাদের দেশের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামোর কারণে শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান দেওয়া সম্ভব হয় না ফলে বেকারত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু ছাত্রসমাজের উচিত নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরি করা। শিক্ষিত যুবকরা যদি কৃষি কাজ, মৎস্য চাষ, পশুপালন, নার্সারি ইত্যাদি ক্ষেত্রে তাদের মেধা ও শ্রমকে কাজে লাগায় তাহলে দেশের উন্নয়ন যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি বেকারত্বও হ্রাস পাবে।

রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দায়িত্ব ও কর্তব্যঃ ছাত্রসমাজ অনাচার, অবিচার, অত্যাচার ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সবসময়ই সোচ্চার। আদর্শগতভাবেই তারা রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে। রাজনীতির বিষবৃক্ষের মূলোৎপাটন করা ছাত্রদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। যুগে যুগে ছাত্রসমাজ দেশের স্বাধীনতা অর্জনে এবং স্বাধীনতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছে। শিক্ষিত, ব্যক্তিত্ববোধসম্পন্ন ছাত্রসমাজ কখনো পরাধীনতার গ্লানি বয়ে বেড়াতে চায় না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ছাত্রদের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। তাছাড়া মাতৃভাষার জন্য তারা যে ত্যাগ স্বীকার করেছে তা ইতিহাসের পাতায় বিরল। ১৯৬২ সালের হা